সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাবের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল ডাকঘর’ এর মহাপরিকল্পনা ও কর্মকৌশল উপস্থাপন
ঢাকা-বাংলাদেশ, ২১ অক্টোবর, ২০২১: আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ অগ্রযাত্রায় ডাক অধিদপ্তর সেবা ডিজিটাইজেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ডাকসেবার উন্নয়নে আজ ২১ অক্টোবর ২০২১ রাজধানীর আগারগাঁও-এ অবস্থিত ডাকভবনের অডিটোরিয়ামে ডিজিটাল সার্ভিস এক্সিলারেটর, এটুআই, আইসিটি বিভাগের কারিগরি সহায়তায় ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাবের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল ডাকঘর’ এর মহাপরিকল্পনা ও কর্মকৌশল উপস্থাপন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম, পিএএ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব জনাব মোঃ আফজাল হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি-বেসরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ডাক বিভাগের কোন বিকল্প নেই। যদি কেউ মনে করে চিঠির দিন শেষ মানে ডাক বিভাগেরও দিন শেষ হয়ে গেছে তবে ভুল করবে। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ কিন্তু এর জনসংখ্যা অনেক বেশি, এই অধিক জনগণের কাছে সেবা পৌঁছানোর জন্য ডাক বিভাগের দেশব্যাপী ৯৫০০ কেন্দ্র রয়েছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এবং ডাক বিভাগের এই কেন্দ্রগুলোকে যুক্ত করা হলে সরকারের জন্য অসাধারণ সম্পৃক্ততা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটালাইজড করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো এই ডাক বিভাগ ডিজিটালাইজেশন। সহায়তায় ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাবে সরাসরি অংশগ্রহণ করে বুঝতে পেরেছি এটি একটি অসাধারণ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ডাক আজ একটি জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই প্রথম এর পরিকল্পনার ভিত্তি স্থাপন হয়েছে। তিনি বলেন, ডাক বিভাগ আধুনিকায়নের জন্য ১৯৯৫ সাল থেকে সফটওয়্যার ও অন্যান্য পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি, বলেন, “বাংলাদেশে যখন ডিজিটাল সার্ভিস, প্রযুক্তি শিল্প কিংবা প্রযুক্তি নির্ভর কর্মসংস্থান বলতে কিছুই ছিল না, তখন বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা মাত্র ৫৬ লাখ ছিল। সেই বাংলাদেশকে মাত্র ১২ বছরের ব্যবধানে ১২ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, প্রায় ২০লক্ষ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তি শিল্প থেকে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় অর্জনের পাশাপাশি প্রায় ১৫০০ ধরনের সেবা আমরা ডিজিটাইজড করতে সক্ষম হয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির সহায়তায় হাতের মুঠোয় সেবা পৌঁছে দিতে পেরেছি আমরা।” ডাকঘরের সঞ্চয় কার্যক্রমকে ঘিরে থাকা নিজের শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিচারণ করে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাকঘরগুলোকে ডিজিটাল ডাকঘরে রুপান্তর করতে চান। তারই নির্দেশনা পালনে আইসিটি বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, ডাক অধিদপ্তর ও এটুআই সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। এর প্রেক্ষিতে ডাক কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে এটুআই-এর ডিএসএ টিম মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের প্রায় ৩০০০ সেবার মধ্যে আমরা ডাকঘরের ৮০টি সেবা চিহ্নিত করতে পেরেছি। এই সেবা ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে জনগণের সময় এবং শ্রম কমে আসবে। এছাড়াও এইসব সেবাগুলো তত্ত্বাবধানের জন্য ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাক্ট তৈরির ঘোষণা করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।
আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম, পিএএ, বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়-এর দিক-নির্দেশনায় ২০১৭ সালে ডিজিটাল সার্ভিস রোডম্যাপ এবং ২০১৯ সালে ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাব-এর যাত্রা শুরু হয়। তাঁরই পরামর্শ অনুযায়ী আমরা সকল মন্ত্রণালয় ও তার আওতাধীন দপ্তরসমূহের সকল সেবা ডিজিটাইজড করার কার্যক্রম শুরু করি। বর্তমানে ডিএসডিএল সার্ভিস ডিজিটাইজড করার একটি পরিচিত পদ্ধতি। বিদ্যমান সেবা পদ্ধতি গবেষণা করে সহজ পদ্ধতিতে অটোমেশনের পরিকল্পনা এর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে, যা জনগণের সময় এবং শ্রম উভয়ই বাঁচাবে।”
সভাপতির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব জনাব মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, আজকে উপস্থাপিত মহাপরিকল্পনা ও কর্মকৌশলটি ৬ দিনব্যাপী ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাবের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যা সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারীদের অংশগ্রহণে ডাক অধিদপ্তর ও এটুআই-এর বিশেষজ্ঞগণের মূল্যবান কারিগরি সহয়তার মাধ্যমে এই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে খুব শীঘ্রই ডাকঘর সেবাকে প্রান্তিক মানুষের কাছে নতুন রূপে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ডিজিটাল ডাকঘর-এর মহাপরিকল্পনা ও কর্মকৌশল উপস্থাপন এবং প্রণয়নের জন্য ডাক অধিদপ্তর, আইসিটি বিভাগ, এটুআই ও ডিজিটাল সার্ভিস এক্সিলারেটর এর যৌথ উদ্যোগে গত ২০-২৫ জুন ২০২১ সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাব (ডিএসডিএল) অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে নকশাকরণ ও পরিকল্পনাকৃত সিস্টেমগুলোর ডিজিটাল সেবা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন সম্পন্ন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত কর্মশালা হতে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন ও উন্নয়ন প্রস্তাবনা উপস্থাপনের লক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মোঃ কামাল হোসেন, ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) জনাব মোঃ সিরাজ উদ্দিন এবং এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর। অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়েছিলেন এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজার জনাব আনীর চৌধুরী। অনুষ্ঠানে শুরুতেই ‘ডিজিটাল ডাকঘর’ এর মহাপরিকল্পনা ও কর্মকৌশল উপস্থাপন করেন এটুআই-এর চিফ ই-গভর্নেন্স স্ট্যাটেজিস্ট (ডিজিটাল সার্ভিস এক্সিলেটর) জনাব ফরহাদ জাহিদ শেখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, ডাক অধিদপ্তর, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং এটুআই এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।